প্রশাসনের নামে চাঁদা তুলে কোটিপতি মিন্টু

Sadakalosangbad

 রাজশাহীতে প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তাদের নামে মাসোহারা উত্তোলন ও ব্লাকমেইলসহ হয়রানির বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছে এক প্রতারকের বিরুদ্ধে। তার এসব চাঁদাবাজি ও হয়রানির প্রায় দুই ডজন অডিও কল রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। ওই প্রতারকের নাম মিন্টু মিয়া (২৫)। সে নাটোর জেলার ছাতনী এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে বলে জানা যায়।

ওই প্রতারক বিভিন্ন প্রশাসনের নামে মাদক কারবারি ও সাধারন মানুষকে জিম্মি করে কোটি কোটি টাকা চাঁদা আদায় করেন বলে জানা গেছে। তিনি প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে বিভিন্ন নামে পরিচিত বলেও ফাঁস হওয়া কল রেকর্ড থেকে জানা যায়।

ওই প্রতারক প্রতিমাসে র‍্যাব, পুলিশ, বিজিবি, পিবিআইসহ প্রশাসনের বিভিন্ন অসাধু কর্মকর্তাদের নামে মাদক স্পট থেকে মাসোহারা উত্তোলন করে থাকেন। সে বিজিবি’র নিকট সবুজ নামে পরিচিত। অপরদিকে র‍্যাব, ডিবি পুলিশের নিকট মাইকেল ওরফে মিন্টু নামেও পরিচিত। ইতোমধ্যে বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ী ও সাধারন মানুষকে জিম্মি করে টাকা লেনদেনের কিছু ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ড সংবাদকর্মীদের হাতে এসেছে।

অডিও কল থেকে শুনা যায়, তিনি বিভিন্ন প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তা যেমন র‍্যাব, পুলিশ, বিজিবি, জেলা ডিবি পুলিশ ও পিবিআই কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে মাসিক মাসোহারা ও মামলার ভয়- ভিতি প্রদান করে মোটা অংকের উৎকোচ দাবি করছেন। গোদাগাড়ী ও চারঘাট এলাকার সকল মাদক কারবারি তাকে প্রশাসনের মাসিক আদায়কারী হিসেবে চিনেন। মাছ বিক্রেতা থেকে এখন তিনি কোটি টাকার মালিক। নাটোরে করেছেন আলিশান বাড়ি।

সম্প্রতি সোর্স মিন্টু গোদাগাড়ীতে কয়েকজন মাদক কারবারি ও সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে অর্থ দাবি করেন। মাদক কারবারিরা তাকে টাকা দিলেও সাধারণ মানুষরা তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় অর্থ দাবি করা কয়েকজনের অডিও কল রেকর্ড ফাঁস করেন। একজনকে একটি মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা চাঁদা চায়।

অডিও কল রেকর্ড থেকে আরো জানা যায়, পিবিআই রাজশাহীতে কর্মরত একজন পুলিশ অফিসারের নাম বলে ওই টাকা দাবি করেন। অডিও কলে ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম সুমন বললেও আসলে তাঁর পাঠানো ছবি অনুযায়ী সে এএসআই রবিউল। মিন্টুর সঙ্গে এএসআই রবিউলের সঙ্গে টাকা লেনদেনের একটি অডিও কল রেকর্ডও ফাঁস হয়। মুলত চাঁদা দাবিকারীর নিকট বিশ্বাস যোগাতেই মিন্টু ওই কর্মকর্তার অডিও কল রেকর্ড তাকে দেন। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো পিবিআই রাজশাহীতে কর্মরত এএসআই রবিউলের বাড়িও নাটোর জেলায়।

এ বিষয়ে এএসআই রবিউলের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি সব অস্বীকার করেন। তিনি এরকম কাউকে চিনেন না বলেও জানান। অডিও কলে তাঁর ভয়েস কিনা জানতে তাঁকে অডিও কলের কথপোকথন শোনালে তিনি বলেন এটা আমার ভয়েস না। ভুক্তভোগীকে মিন্টু ভয় দেখায় টাকা না দিলে বড় বিপদ হবে বলে হুশিয়ার করেন।

আরও অনেকগুলো অডিও কল রেকর্ড থেকে শুনা যায়, মিন্টু জেলা পুলিশের সনাতন চক্রবর্তীর নামেও তাঁকে ভয় দেখাচ্ছেন। এমনকি ওই অফিসারের সঙ্গে তার কথা হয়েছে মর্মে অর্থ দিলে মামলা থেকে নাম কাটিয়ে দিবেন তিনি। এরকম বহু মামলায় অজ্ঞাত নামে তিনি অনেকের নাম কাটিয়েছেন আবার অনেকের নাম ঢুকিয়েছেন। কল রেকর্ডে সনাতন চক্রবর্তীকে এসপির পরে তাঁর অবস্থান বলে উল্লেখ্য করতে শোনা যাচ্ছে।

তবে গোদাগাড়ী সাধারণ মানুষ বলছেন মিন্টু মুলত জেলা ডিবি’র পরিদর্শক আতিকুর রেজার লোক। তাঁর নামে মাসোহারা উত্তোলন করাই তাঁর কাজ৷ যারা মাসোহারা দেয় না তাদেরকে আতিকুরকে দিয়ে আটক করায় এবং মামলা দেওয়ায়। অডিওতে তিনি আরও বলেন সম্প্রতি উজ্জ্বল নামে একজনকে তাঁর কথা না শোনায় তাকে তিনি আটক করিয়েছেন। র‍্যাবের মাঠ পর্যায়ে দুজন অফিসারের নামও উল্লেখ্য করেন। তাদের সঙ্গে তার সক্ষতা রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন। অডিওতে নাম নেওয়া ওই কর্মকর্তার নাম ইমদাদ ও মাসুদ বলেও জানায় তিনি।

কয়েকজন সাধারণ ভুক্তভোগী বলেন, মিন্টুর অনেক ক্ষমতা যখন তখন সে যে কাউকে ফাঁসাতে পারেন। যাকে তাকে আটক করানোর ক্ষমতা রয়েছে তার। তার কথায় প্রশাসন মামলা দেয়। ইতোমধ্যে সে যখন যা বলেছে তাই হয়েছে বা প্রসাশন তাই করেছে। একারণে তাকে সবাই ভয় পায়।

একের পর এক হয়রানির শিকার এক ভুক্তভোগী পরিবার জানান, ওই সোর্স গোদাগাড়ীর বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ীর নিকট বিজিবি, র‍্যাব, ডিবি পুলিশের লোক বলেই পরিচিত। মাসোহারা না পেলে সে তৎক্ষনাৎ তাদের আটক করায়। এর আগে এক মাদক কারবারিকে হুমকি দিয়ে চাঁদা না পেয়ে ডিবি’র পরিদর্শক আতিকুর রেজাকে দিয়ে ধরিয়ে দেন। অপরদিকে গত ১৫ নভেম্বর মাদক না পেয়েও একজনকে টাকা নেওয়ার উদ্দেশ্যে আটক করায় এবং টাকা না পেয়ে পরে মামলা দেয়। এদিকে ওই সোর্স মিন্টুর মোবাইল নম্বর দিয়ে ট্রুকলারে সার্চ দিলে সিও মিন্টু নাম ভেসে আসে।

প্রতারক মিন্টুর মোবাইল নম্বরে ফোন দিলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে সকল অডিও দেওয়া হয়েছে তা সম্পুর্ণ সত্য নয়। আমার কাছেও অনেক অডিও ভিডিও ফুটেজ আছে। সেগুলো শোনলে বুঝতে পারবেন আসল ঘটনা কি? আমি আপনাদের সঙ্গে দেখা করবো তখন সব বলবো।

কথা বলতে জেলা ডিবি’র পরিদর্শক আতিকুর রেজাকে একাধিকবার ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

রাজশাহী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী বলেন, বিষয়টি আমার জানা নাই। তবে খোঁজ খবর নিচ্ছি। বিষয়টি দেখছি বলে ফোন কেটে দেন।

পিবিআই রাজশাহীতে সদ্য যোগদানকৃত অতিরিক্ত উপ- মহাপুলিশ পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম বলেন, প্রতারকের ডিটেইল দেন। যাচাই বাছাই ছাড়া তো কিছু বলা যাবে না। যাচাই বাছাই পূর্বক ব্যবস্থা
নেওয়া সম্ভব।

বিজিবি-১ রাজশাহীর অধিনায়ককে একাধিকবার ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

Leave a Comment

অনুবাদ