পশ্চিম রেলে নিয়োগ বাণিজ্যের নেপথ্যে কে এই সৈকত?

0
168
নিয়োগ

পশ্চিমাঞ্চল রেলে টিএলআর থেকে পোর্টার পদে স্থায়ীকরণে ব্যাপক ঘাপলাসহ মোটা অংকের ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে এস ডাব্লু অফিসের বড় বাবু সৈকত এর বিরুদ্ধে।

জানা যায়, অস্থায়ী টিএলআর পদে কর্মরত ২৩ জন চাকুরী স্থায়ীকরণের দাবিতে ২০১৯ সালে মামলা করেন। যাহার মামলা নং ৩০৩। এই মামলার রায় নিয়ে চলছে লুকোচুরি। ২০২০ সালের শেষের দিকে আইন কর্মকর্তার এক চিঠির জবাবে ১৯ জনকে পোর্টার পদে স্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে আবার সেই আইন কর্মকর্তার ২য় চিঠিতে নিয়োগ স্থগিত করার আদেশ দিলেও এখন পযর্ন্ত সেই নিয়োগ স্থগিত না করে সময় ক্ষেপন করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সম্প্রতি সিপিও এর যোগসাজশে স্কুলের (টিএলআর) পিয়ন পদে ৪ জনকে নিয়োগ দিয়েছে এস ডাব্লু অফিসের বড় বাবু সৈকত। উক্ত চারজন ব্যক্তি সৈকতের নিজ এলাকার লোক। প্রতিজনের কাছে নেওয়া হয়েছে ১০ লাখ করে।

এ যাবৎ যত নিয়োগ হয়েছে সব নিয়োগপ্রাপ্তদের কাগজ পরীক্ষার নামে প্রতিটি পদের বিপরীতে ১ লাখ করে নিয়েছেন এস ডাব্লু অফিসের সৈকত।
অভিযোগ উঠেছে কয়েক বছরে ১৫-২০ কোটি টাকার নিয়োগ বানিজ্য করেছেন সৈকত।

উক্ত বিষয়ে এস ডাব্লু অফিসের বড় বাবু সৈকত বলেন, ঘুষ গ্রহনের অভিযোগ সঠিক নয়। আমি কাউকে নিয়োগ দিতে পারি না। এগুলো অফিসারদের বিষয়, আমি শুধু ফাইল পুটআপ করি। মামলার প্রেক্ষিতে ২৩ জন পোর্টার মধ্যে ২২ জনকে স্থায়ীকরণ করা হয়েছে। আইন কর্মকর্তার চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত নিয়োগ প্রদান করা হয়। পরে আইন কর্মকর্তা ২য় চিঠিতে জানায় পূর্বের রায়ের কপিটি জাল ছিল। সেই সাথে নিয়োগ স্থগিতের সুপারিশ করেন তিনি। সে অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে।

আইন কর্মকর্তা আল মাহমুদ বলেন, প্রথমে নিয়োগ প্রাপ্তদের নিকট থেকে প্রাপ্ত রায়ের কপি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করি। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, আমাকে দেওয়া রায়ের কপিটি সঠিক নয়। তাই ২য় চিঠিতে নিয়োগ স্থগিত চেয়ে আবারো চিঠি করি, কিন্তু এখন পযর্ন্ত কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

জানতে চাইলে সিনিয়র ওয়েলফেয়ার অফিসার এসএম আকতার হোসেন আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আইন কর্মকর্তার প্রথম চিঠির বলে আমরা নিয়োগ দিয়েছি, আবার তার দ্বিতীয় চিঠি আসলে এই নিয়োগ বাতিলের প্রক্রিয়া ফাইল পুটআপ করেছি ; আমাদের নিজেদের সিদ্ধান্তে কোন কিছুই করার এখতিয়ার নাই ; যেহেতু আইন কর্মকর্তা দ্বিতীয় চিঠিতে বলেছেন, আদালতের আগের কাগজটি অরিজিনাল নয়, সেটা ভুয়া ছিল। তারপরেও আমরা আবারও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করছি।

পিওন পদে চারজন নিয়োগে ঘুষ বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে চিফ পার্সোনেল অফিসার আমিনুল ইসলাম বলেন, এটা বিশ্বাস যোগ্য নয়, অস্থায়ী ভিত্তিতে ৬ মাসের নিয়োগে সর্বোমোট বেতন পাবে ৮৪ হাজার টাকা, আর ঘুষ দিয়েছে ১০ লাখ টাকা, এটা হতে পারে না।

পশ্চিম রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার মিহির কান্তি গুহ বলেন, ১ম বারে আদালতের দেয়া চিঠির আদলে করা জাল চিঠি কেন দেয়া হয়েছিল তার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে কৈফিয়ত চাওয়া হয়েছে। ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি সম্পর্কের তিনি বলেন, এটা প্রমান করা খুব কঠিন ; এ বিষয়ে যারা ঘুষ দিয়েছে তারা সঠিক তথ্য প্রমান দিলেই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব।

উল্লেখ্য যে, ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বরে মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি সুপারি আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে পশ্চিমাঞ্চল রেলের তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তারা হলেন- সাবেক কন্ট্রোলার অব স্টোরস (সিওএস) প্রকৌশলী মো. বেলাল হোসেন সরকার, সাবেক চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার (সিসিএম) এএমএম শাহনেওয়াজ, সাবেক সহকারী কন্ট্রোলার অব স্টোরস (এসিওএস) মো. জাহিদ কাওছার। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত আরও ১০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।

অভিযুক্ত ১০ জন হলেন-পশ্চিমাঞ্চল রেলের এসিসিএমসিআর শেখ আবদুল জব্বার, ডেপুটি সিওপিএস মোছা. হাসিনা খাতুন, ডিএমএ হেডকোয়ার্টার শ্যামলী রানী রায়, এফএএন্ডসিএও মো. শরিফুল ইসলাম, ডেপুটি সিসিএম ফুয়াদ হোসেন আনন্দ, ডিএফএ অর্থ মো. আলমগীর, এফএএন্ডসিএও মো. মসিহ-উল-হাসান, অতিরিক্ত এফএএন্ডসিএও মো. গোলাম রহমান, অতিরিক্ত এফএএন্ডসিও গোলাম রাব্বানী ও সাবেক সিসিএম ও বর্তমানে পশ্চিমাঞ্চল রেলের জিএম মিহির কান্তি গুহ। ২৯ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হয়।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেলের জন্য ২০টি আইটেম কেনায় ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা যেমন ক্ষতি হয়, তেমনি ট্রেন পরিচালনায়ও ঝুঁকি বাড়ে। কেনাকাটার ঘটনা তদন্তে ২০ সেপ্টেম্বর রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. ভুবন চন্দ্র বিশ্বাসকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটি গত বছরের ৯ ডিসেম্বর রেলপথমন্ত্রীর কাছে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়। রিপোর্টে ১৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে