রাজশাহীতে টাকা ছাড়া মিলেনা ভবন তৈরির নকশা

নিজস্ব প্রতিনিধি

0
20

রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অথরাইজ অফিসার আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে নকশা বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘদিন দিন যাবৎ আরডিএ এর অথরাইজ অফিসার হিসেবে কর্মরত তিনি। দীর্ঘ সময়ে নকশা বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতি করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। ঘুষ গ্রহণকালে হাতেনাতে গ্রেফতারও হয়েছিলেন তিনি। ঘুষ বানিজ্যে তুঙ্গে থাকা এই অফিসার এখনো রয়েছেন বহাল তবিয়তে। তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত কোন ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজশাহীতে এখন অনুমোদনহীন দালান কোটায় ছয়লাব। নকশা অনুমোদন না পেয়ে অনেকেই অনুমোদন ছাড়াই গড়ে তুলছেন বড় বড় ইমারত। এতে অপরিকল্পিত নগরায়নে পরিনত হচ্ছে রাজশাহী মহানগর, বাড়ছে ঝুঁকি। গত তিন বছরে নকশা অনুমোদন পেয়েছে প্রায় ১২শ ভবন। অথচ গত তিন বছরে ভবন তৈরী হয়েছে প্রায় ৫ হাজার। ভবনের নকশা তৈরিতে বিল্ডিং মালিকদের গুণতে হচ্ছে মোটা অংকের উৎকোচ। যেসকল ভবনের মালিকরা উৎকোচ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন তাদের অনুমোদন মিলেনি।

অভিযোগ আছে, আরডিএ’র নকশা অনুমোদন নিতে ভবন মালিকদের গুনতে হয়েছে ৫ লাখ থেকে ২০ লক্ষ টাকা। আরডিএ’র অথরাইজ অফিসারের বেপরোয়া বাণিজ্যে অতিষ্ঠ ভবন মালিকরা। বেপরোয়া বাণিজ্যে দিনের পর দিন আরডিএ কর্তৃপক্ষের নিকট ধর্ণা দিচ্ছেন ভবন মালিকরা।
ভবন মালিকদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ দপ্তরে কর্মরত অথরাইজ অফিসার আবুল কালাম আজাদ। তাঁর ঘুষ বানিজ্য এখন চরমে। প্রতিটি বিল্ডিং এ নিচ্ছেন মোটা অংকের উৎকোচ। সম্প্রতি চারটি ভবন থেকে নিয়েছেন ১৮ লাখ টাকা।

নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক এক ভবন মালিক জানায়, বৈধ নথিপত্র দিয়ে নকশার আবেদন করেছি। কিন্তু অথরাইজ অফিসার নানা অজুহাতে নকশার অনুমোদন দিচ্ছেন না। এরপর একটি মাধ্যম দিয়ে চার লাখ টাকা দাবি করেন।
তিনি আরও বলেন, ২০০৭ সালে যৌথ বাহিনীর অভিযানের সময় ওই কর্মকর্তা ভবনের নকশা অনুমোদনের জন্য আদায় করা টাকাসহ ধরা পড়েছিলেন। বেশ কিছুদিন কারাগারে থেকে আবারও একই পদে বহাল হন তিনি। তাঁর খূঁটির জোর কোথায় প্রশ্ন রাখেন তিনি।

আরডিএ’র গোপন তথ্যে জানা যায়, গত তিন বছরে রাজশাহী নগরীতে প্রায় ১২০০ টি ভবনের নকশা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এসবের মধ্যে একতলা থেকে সাততলা পর্যন্ত ভবন এগারো শত’র অধিক, এবং আটতলা থেকে ২০ তলা পর্যন্ত প্রায় ১০০টি। অনুমোদন দেওয়া ভবনের সংখ্যা জানতে চাইলে বিভিন্ন অজুহাতে এড়িয়ে যান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। তিনি বলেন, তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করে তথ্য নিতে হবে। এদিকে তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চেয়ে তথ্য পায়নি অনেকেই।

অভিযোগ উঠেছে, ওই সব ভবন অনুমোদন দিতে গিয়ে অথরাইজড অফিসার আবুল কালাম আজাদসহ কয়েকজন কর্মকর্তা ব্যাপক বাণিজ্যের আশ্রয় নিয়েছেন।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আবুল কালাম আজাদ এখন আর নিজে নগদ টাকা নেন না। ২০০৭ সালে টাকাসহ যৌথ বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার পর থেকে তিনি টাকা আদায় করেন ভিন্ন পন্থায়।
আরডিএর নানা হয়রানির ভয়ে ওই ভবন মালিকরা তাঁদের নাম প্রকাশ করতে রাজি না হলেও প্রয়োজনে যেকোনো তদন্ত সংস্থার কাছে বিষয়টি তুলে ধরবেন বলে তাঁরা জানান।

ভুক্তভোগী ভবন মালিকরা বলেন, নকশা অনুমোদনের জন্য আরডিএর একটি নির্দিষ্ট ফি আছে। সেই ফির বাইরেও লাখ লাখ টাকা তুলে দিতে হচ্ছে অথরাইজড অফিসারকে। টাকা ছাড়া কোনো নথিতেই তিনি সই করেন না। আবার টাকা দিতে হচ্ছে তাঁর নিকটাত্মীয়র মাধ্যমে। তিনি টাকা নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দিতে বলেন। এর পরই মেলে অনুমোদন।
রাজশাহী নগরীর লক্ষীপুর, সাহেব বাজার, উপশহর এলাকার একাধিক ব্যক্তি বলেন, ভবনের নকশার অনুমোদন নিতে গেলে আরডিএর অথরাইজড অফিসার আবুল কালাম আজাদ মোটা অংকের উৎকোচ দাবি করেন। বিভিন্ন অজুহাতে নকশা অনুমোদনে বাধা দেন আরডিএ’র এই কর্মকর্তা।

উৎকোচের বিষয়টি অস্বীকার করেন আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমি ওভার টেলিফোনে কোন তথ্য বা বক্তব্য দিতে পারবো না। তথ্য বা বক্তব্য নিতে হলে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন ও বক্তব্য নিতে হলে অফিসে আসতে হবে। গত ২০০৭ সালে ঘুষের টাকাসহ আটকের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে যান।

এসব বিষয়ে জানতে আরডিএ’র চেয়ারম্যান আনওয়ার হোসেনকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে